রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সংকটে রবের অভিমুখী হওয়া

এইচ এম মনিরুজ্জামান:
ফেরাউন হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এ কথা শোনার পর হজরত মুসা (আ.)-কে জীবন রক্ষার্থে মিসর ছেড়ে মাদইয়ানে চলে আসতে হয়। অজানা-অচেনা জনপদে ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় এসে তিনি দেখেন, দুটি মেয়ে পানি পান করানোর জন্য মেষপাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কুয়া থেকে পানি পান করাতে পারছে না। খবর নিয়ে জানা গেল, তাদের বাবা বয়োবৃদ্ধ, মেষপালকে পান করানোর মতো বয়স তার নেই। নিরুপায় হয়ে এই মেয়েরা নিজেরাই মেষপালকে পানি পান করাতে এসেছে। পুরুষ মেষপালকদের সঙ্গে একসঙ্গে পানি পান করানো সম্ভব নয় বলে তারা অপেক্ষা করছে।

হজরত মুসা (আ.) তাদের সম্মানার্থে মেষপালকে পানি পান করিয়ে দিলেন। কাজ শেষ হলে তারা বাড়ি ফিরে গেল আর তিনি একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রামের জন্য বসলেন। ভিনদেশে তার না খাদ্যের কোনো ব্যবস্থা ছিল আর না থাকার কোনো বন্দোবস্ত। গতকাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ফেরাউনের রাজপ্রাসাদে রাজসিক সব ব্যবস্থাপনা ও আয়োজনের মধ্যে, আজ তার থাকা ও খাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকুও নেই!

বাহ্যত কোনো বন্দোবস্ত না থাকলেও তিনি জানতেন সেই মহান রাব্বুল আলামিন তার সঙ্গে আছেন, জীবনের নানা প্রবাহে যিনি তাকে হেফাজতের বিস্ময়কর সব ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন।

ফেরাউনের তল্লাশিবাহিনী যখন বনী ইসরাঈলের নারীদের কোল থেকে পুত্রসন্তান ছিনিয়ে নিয়ে মমতাময়ী মায়ের কোল খালি করছিল, তখন তার রব অদ্ভুতভাবে তাকে রক্ষা করেছেন।

যখন তার জন্মদাত্রী মা ফেরাউন বাহিনী থেকে রক্ষার জন্য তাকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন, জনমানুষ থেকে বহু দূরে নদীর তরঙ্গপ্রবাহে যখন তিনি একাকী অজানার পথে ভেসে যাচ্ছিলেন, তখনো তার রব তার সঙ্গে ছিলেন। আল্লাহর ইশারাতেই সেদিন ফেরাউনপতœী তাকে নদী থেকে তুলে নিয়েছিল। যে ফেরাউন তার কাছ থেকে বাঁচার জন্য এত এত নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করেছিল তার রব তাকে সেই ফেরাউনেরই প্রাসাদে স্বয়ং তার স্ত্রীর কোলে বড় করেছেন!

সেই মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি পূর্ণ আস্থা নিয়ে সমর্পিত চিত্তে তিনি প্রার্থনা করলেন, ‘হে আমার রব! আপনি আমার প্রতি যে কল্যাণ বর্ষণ করবেন, আমি তার ভিখিরি।’ সুরা কাসাস : ২৪

বড় হৃদয়স্পর্শী প্রার্থনাবাক্য। নিজের প্রয়োজনের কথা তো অকপটে তুলে ধরলেন, কিন্তু নির্দিষ্ট করে কিছু চাইলেন না। বরং আল্লাহর কাছে ন্যস্ত করে দিলেন আপনি যা-ই আমাকে দান করবেন, তা-ই আমি হাত পেতে গ্রহণ করব। আমি আপনার দরবারের এক নগণ্য ভিখিরি! আল্লাহতায়ালা তার দোয়া কবুল করলেন। দেখা গেল, দুই মেয়ের এক মেয়ে লজ্জাবনত পদে ফিরে এসে বলছেন, আমার বাবা আপনাকে ডাকছেন। আপনি আমাদের উপকার করেছেন, তাই তিনি আপনার জন্য কিছু করতে চান।

হজরত মুসা (আ.) বুঝতে পারলেন, আল্লাহতায়ালা গায়েব থেকে তার জন্য কোনো ব্যবস্থা করেছেন। একটু আগেই তিনি প্রার্থনা করেছেন। তাই তিনি তাদের বাবার কাছে যেতে রাজি হয়ে গেলেন। এর পরের ঘটনা লম্বা। ওই বয়োবৃদ্ধের ঘরে পৌঁছার পর তিনি তাকে মিসর থেকে বেরিয়ে আসার কথা খুলে বলেন। বৃদ্ধ তাকে সান্ত্বনা দেন এবং তাদের কাছেই তাকে থেকে যেতে বলেন। তিনি তার প্রস্তাব মেনে সেখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় দশ বছর সেখানে অবস্থানের পর মিসরে ফিরে আসেন। আসার পথে তুর পর্বতে তাকে নবুয়ত দান করা হয় এবং তিনি নবুয়তের দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

হজরত মুসা (আ.)-এর এই প্রার্থনা এবং আল্লাহর গায়েবি সাহায্য থেকে আমরা শিক্ষা পাই

ক. সমস্যা-সংকটে আল্লাহর প্রতি অভিনিবিষ্ট হওয়া চাই। একনিষ্ঠ মনে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা হলে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দান করেন।

খ. নির্দিষ্ট কিছুর জন্য আল্লাহর কাছে যেমন প্রার্থনা করা যায়, তেমনি অনির্দিষ্টভাবেও তার কাছে প্রার্থনা করা যায়। গ. আল্লাহতায়ালা আপন অসীম হেকমতে বান্দার জন্য যখন যে বিষয়ের ফায়সালা করেন, মুমিনের কর্তব্য, সেটি খুশিমনে এবং সাদরে গ্রহণ করা। কারণ কোনো বিষয়ে বাস্তবিক কল্যাণ তা আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION